গাজীপুরের কাশিমপুরে ওএমএসের (ওপেন মার্কেট সেল) চাল ও আটা বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখাযায়, গাজীপুর মহানগরীর কাশিমপুর থানাধীন ৩নং ওয়ার্ডের পরিচালিত ওএমএস কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে।
কাশিমপুরে ওপেন মার্কেট সেল (ওএমএস) কার্যক্রমে চাল ও আটা বিতরণে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ বেশ পুরোনো। কিন্তু সবকিছু ধামাচাপা দিয়েই কৌশলে বাধাহীনভাবে এ সব করে আসছে ডিলাররা।ওএমএস ডিলারদের মধ্যে অনেকেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম পরিচালনা করেন না। বিশেষ করে জনপ্রতি নির্ধারিত পরিমাণে চাল-আটা বিক্রি না করে অধিক মূল্যে বস্তা ধরে কালো বাজারে বিক্রি করেন। এছাড়াও অনেকেই বিক্রির গ্রাহক তালিকা (রোস্টার) নিজেরাই মনগড়া নাম দিয়ে তৈরি করেন।এছাড়া একটি পণ্য দিয়ে চাল ও আটার দুইটি গ্রাহক তালিকায় টিপসই রাখা হয়।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় , গাজীপুর মহানগরীর ৩ নং ওয়ার্ডের বারেন্ডা এলাকার ওএমএস ডিলার মোসাঃ শাহনাজ বেগমের পরিচালিত ওএমএস পণ্য বিক্রি কার্যক্রম ব্যাপক অনিয়মের মধ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে। সকাল ১১ টা বাজলেও বিক্রি কার্যক্রম শুরুই হয় নাই।পুরুষ ও নারীদের লাইনে অন্তত ১২০ জন্য ভোক্তা পণ্য নেয়ার জন্য সকাল ৭টা থেকে অপেক্ষমান।তাদেরকে লাইনে দাড় করিয়ে রেখে সকাল প্রায় ১১টায় ওএমএস পণ্য বোঝাই একটি ট্রাক আসে। এরপর একে একে চাল ও আটার বস্তা নামিয়ে ট্রাক অন্যত্র রওনা দেয়।এসময় পণ্য বহনকারী ট্রাকের লোডারকে পরিচয় না দিয়ে কতটুকু পণ্য নেমেছে এমন প্রশ্ন করলে তিনি সম্পূর্ণ পণ্যই নামিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানান।এরপর সাংবাদিকরা চাল ও আটার পরিমাণ দেখতে বিতরণ কক্ষে প্রবেশ করে ৫০ কেজির মোট ১৫ বস্তা আটা (৭৫০ কেজি) ও ৩০ কেজির ১৯ বস্তা (৫৭০ কেজি) চাউল দেখতে পায়। এ সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের দেখে বিতরণ কাজের দায়িত্ত্বে থাকা সাকিব খন্দকার ও মাস্টার রুমানসহ অন্যান্যরা কিছুটা হতাশ হয়ে পরে।পরে মাস্টার রুমান ট্রাকে থাকে এক ব্যক্তির সাথে কথা বললে অন্যত্র রওনা দেয়া ট্রাক কেন্দ্রে আবার ফেরত আসে এবং আবারও ৫ বস্তা (২৫০ কেজি) আটা ও ১৪ বস্তা (৪২০ কেজি) চাউল বিতরণ কক্ষে রাখে।এসময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখে মাস্টার রোমান বলেন,"আসলে আমাদের হিসেবে গড়মিলের কারণে এমনটা হয়েছে,তাই ট্রাক ফেরত এসে আবারও বাকি পণ্য নামিয়ে দেয়।"
ভোক্তাদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ,কখনোই এই কেন্দ্রে বরাদ্দকৃত ১ টন চাল ও ১ টন আটা আসে না।গোপনে অন্যত্র বিক্রি বা সড়িয়ে ফেলার অভিযোগ করেন উপস্থিত অনেক ভোক্তা।ভোক্তাদের সাথে কথা বলতে চাইলে অনেকেই পরবর্তীতে পণ্য না পাওয়ার ভয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।
অন্যদিকে বেশ কয়েকজন ভোক্তা অভিযোগ করেন,এ বিতরণ কেন্দ্রে অনেক ভোক্তাকেই ৫ কেজি আটা অথবা ৫ কেজি চাউলের যেকোনো একটি পণ্য নিতে বাধ্য করা হয়, দুটো পণ্য চাইলেও দেয়া হয় না।ভোক্তারা অভিযোগ করেন আগত ভোক্তাদের মধ্যে কিছু কিছু একক ব্যক্তির থেকে নির্ধারিত পণ্যের মূল্যের চাইতে ৫০-২০০ পর্যন্ত অতরিক্ত অর্থ নিয়ে তাদেরকে ১৫-৩০ কেজি পর্যন্ত চাহিদামতো পণ্য দেয়া হয়।এছাড়া ডিলারের লোকজন কিছু কিছু ভোক্তাদেরকে অশ্রাব্য ভাষায় কটু কথা বলেন,পণ্য না দেয়ারও হুমকি দিয়ে থাকেন নিয়মিত। তাদের কটু কথার বিরোধিতা করলে পণ্য পাওয়া যাবেনা এমন ভয়ে বিক্রয় কেন্দ্রের দায়িত্বে থাকাদের সাথে কোন বিরোধে জড়ায় না সাধারণ খেটে খাওয়া এসব ভোক্তারা।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক প্রণীত ওএমএস কার্যক্রম নীতিমালার কোন তোয়াক্কায় করে না এই বিক্রয় কেন্দ্র।নীতিমালায় বলা হয়েছে, খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নির্ধারিত প্যানাফ্লেক্স (লাল রং) ৬ ফুট x ৩ ফুট সাইজের ব্যানার বিক্রয় কেন্দ্রের বাইরে অবশ্যই থাকতে হবে,যেখানে ঢাকা রেশনিং/ আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক/জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের ও ডিলারের মোবাইল নাম্বার ও ভোক্তাদের যেকোনো অভিযোগের জন্য ১৬১৫৫ ও ৩৩৩ নাম্বারসমূহ উল্লেখ করতে হবে। কিন্তু এই কেন্দ্রে ঢুকে কোনরুপ ব্যানার লক্ষ্য যায় নি।পরবর্তীতে প্রশ্নের মুখে দ্রুত একটি ব্যানার সাটানো হয়।যেখানে উল্লেখিতদের কারও নাম্বার এমনকি ভোক্তাদের অভিযোগের জন্যও কোন অভিযোগের নাম্বার দেয়া নাই।যা নীতিমালার চুড়ান্ত লংঘন।
এছাড়া দুপুর পার হলেই পণ্য শেষ বলে ভোক্তাদের পরের দিন আসতে বলে কেন্দ্র খালি করে রিক্সাযোগে বস্তায় বস্তায় পণ্য অন্যত্র সড়িয়ে নেয়া হয় বলেও অভিযোগ করেন কয়েকজন ভোক্তা।নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিক্রয় কেন্দ্রের পাশের বাড়ির এক ব্যক্তি বলেন,লোকজন যখন না থাকে বিশেষ করে সন্ধ্যার পর কেউ কেউ সম্পূর্ণ বস্তা ও কেউ কেউ অর্ধ বস্তা করে চাউল ও আটা নিয়ে যায়। আর এ কাজে সহযোগিতা করেন মাস্টার রোমান,সাকিব খন্দকার ও স্থানীয় আকলিমা বেগম।
এসব অভিযোগের বিষয়ে ডিলার মোসাঃ শাহনাজ বেগমকে মুঠোফোনে কল করলে তিনি বলেন," ডিলারশীপ নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু আমি এ সম্পর্কিত কাজগুলো সম্পর্কে কিছুই জানি না।আপনারা সিরাজের সাথে কথা বলেন। আমি কোন মন্তব্য করতে পারবো না।" সিরাজ কে এমন প্রশ্ন করার সাথে সাথে ডিলার শাহনাজ বেগম পাশে থাকা জৈনক এক ব্যক্তিকে ফোনে ধরিয়ে দেন,নাম প্রকাশ না করা উক্ত ব্যক্তি নিজেকে সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী পরিচয় দিয়ে সাংবাদিকদের বিক্রয় কেন্দ্রে যাওয়া ও ডিলারকে ফোন দেয়া উচিৎ হয় নি বলেও উত্তেজিত হয়ে উঠেন।এসময় উক্ত ব্যক্তি ডিলারের এসব অনিয়ম ও দূর্ণীতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ না করতে সাংবাদিকদের নানাভাবে ভয়ভীতি দেখান এবং এসব নিউজ করে কোন কিছুই করতে পারবেন না বলেও সাংবাদিককে শাসান।
অসংখ্য অভিযোগের বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তর কর্তৃক নিয়োজিত বিক্রয় কেন্দ্রের তদারকি কর্মকর্তা তাহমিনা সুলতানার দায়িত্ব ও কর্তব্যে অবহেলার বিষয়টি স্পষ্ট লক্ষ করা যায়।নিয়ম অনুযায়ী বিক্রয় শুরুর সময় তাহমিনা সুলতানার উপস্থিত থাকার কথা থাকলেও অফিশিয়াল কাজের দোহায় দিয়ে তাহমিনা আক্তার মুঠোফোনে বলেন, "আমি অফিশিয়াল কাজে খুবই ব্যস্ত থাকি,তাই নিয়মিত এসব বিষয় তদারক করা আমার জন্য হয়ে উঠে না।তবে বিষয়গুলোর ব্যাপারে উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা

বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন