রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
ওপেন নিউজ ২৪
সারাদেশ

সারাদেশ

প্রশ্নবিদ্ধ 'ডক্টরেট' পদবী: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাজেরা খাতুনের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ

প্রশ্নবিদ্ধ 'ডক্টরেট' পদবী: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাজেরা খাতুনের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ

সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে 'ডক্টর' পদবী ব্যবহার করছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইসিটি পরিচালক; কিন্তু তার উল্লিখিত আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি স্বীকৃতি না থাকায় নিয়োগবিধি ও পদবী ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।


বিশেষ অনুসন্ধান: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫

বাংলাদেশের একটি মর্যাদা সম্পন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, এর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নামের পাশে ব্যবহৃত ‘ডক্টর’ (ড.) পদবীর বৈধতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে আইসিটি বিভাগের পরিচালক হিসেবে হাজেরা খাতুন-এর নাম উল্লেখ রয়েছে, যেখানে তার নামের আগে 'ড.' পদবী ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ডক্টরেট বা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে— আমেরিকান ইস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি (American East Coast University – AECU), তার স্বীকৃতি এবং আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট রাজ্য কর্তৃপক্ষ।

ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইটে (islamicfoundation.gov.bd) আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন টিমের তালিকায় হাজেরা খাতুনের নাম 'ড.' পদবীসহ অন্তর্ভুক্ত আছে। তিনি 'পরিচালক, আইসিটি বিভাগ' হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অফিসিয়াল ইমেইল তালিকায়ও তথ্য রয়েছে। এই তথ্যটি নিশ্চিত করে যে, একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে তাকে ডক্টরেটধারী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টি যুক্ত— সেই AECU তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদেরকে ডেলাওয়্যার রাজ্য কর্তৃক অনুমোদিত বলে দাবি করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন-এর অফিসিয়াল তালিকায় AECU-কে 'অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান' (Nonauthorized Institutions) হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের চোখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনগত বা স্বীকৃত অনুমোদন নেই, যা একটি ডক্টরেট ডিগ্রির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য অপরিহার্য।

এই দুই তথ্য একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে 'ডক্টর' পদবী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। প্রথমত, একজন কর্মকর্তা সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন একটি পদবী ব্যবহার করছেন, যার ডক্টরেট-ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি নিয়েই সংশয় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, পদোন্নতি বা পদবী অনুমোদনের সময় নিয়োগবিধি অনুসারে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রিগুলোর বৈধতা যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে, AECU-এর স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই পদবী অনুমোদন পেল এবং দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত হচ্ছে— তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।

বিষয়টির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং নিয়োগবিধির শর্ত পূরণ হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট মানবসম্পদ বিভাগ বা আইসিটি বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যদি হাজেরা খাতুনের ডক্টরেট ডিগ্রিটি প্রকৃতপক্ষে অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়ে থাকে, তবে এটি কেবল একজন ব্যক্তির পদবী ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগবিধি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের স্পষ্টীকরণ এবং পদবী ব্যবহারের অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি জনসমক্ষে আনা প্রয়োজন।

আপনার মতামত লিখুন

ওপেন নিউজ ২৪

রোববার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫


প্রশ্নবিদ্ধ 'ডক্টরেট' পদবী: ইসলামিক ফাউন্ডেশনের পরিচালক হাজেরা খাতুনের ডিগ্রি নিয়ে সন্দেহ

প্রকাশের তারিখ : ২৩ অক্টোবর ২০২৫

featured Image
সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে 'ডক্টর' পদবী ব্যবহার করছেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের আইসিটি পরিচালক; কিন্তু তার উল্লিখিত আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনি স্বীকৃতি না থাকায় নিয়োগবিধি ও পদবী ব্যবহারের বৈধতা নিয়ে উঠেছে বড় প্রশ্ন।বিশেষ অনুসন্ধান: ২৩ অক্টোবর, ২০২৫বাংলাদেশের একটি মর্যাদা সম্পন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান, ইসলামিক ফাউন্ডেশন, এর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার নামের পাশে ব্যবহৃত ‘ডক্টর’ (ড.) পদবীর বৈধতা নিয়ে গুরুতর সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইটে আইসিটি বিভাগের পরিচালক হিসেবে হাজেরা খাতুন-এর নাম উল্লেখ রয়েছে, যেখানে তার নামের আগে 'ড.' পদবী ব্যবহার করা হয়েছে। তবে তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ডক্টরেট বা পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন বলে দাবি করা হচ্ছে— আমেরিকান ইস্ট কোস্ট ইউনিভার্সিটি (American East Coast University – AECU), তার স্বীকৃতি এবং আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে স্বয়ং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট রাজ্য কর্তৃপক্ষ।ইসলামিক ফাউন্ডেশনের নিজস্ব সরকারি ওয়েবসাইটে (islamicfoundation.gov.bd) আইসিটি বিভাগের ইনোভেশন টিমের তালিকায় হাজেরা খাতুনের নাম 'ড.' পদবীসহ অন্তর্ভুক্ত আছে। তিনি 'পরিচালক, আইসিটি বিভাগ' হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বলে অফিসিয়াল ইমেইল তালিকায়ও তথ্য রয়েছে। এই তথ্যটি নিশ্চিত করে যে, একটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটে তাকে ডক্টরেটধারী হিসেবে উপস্থাপন করা হচ্ছে।অন্যদিকে, যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এই ডক্টরেট ডিগ্রি অর্জনের বিষয়টি যুক্ত— সেই AECU তাদের ওয়েবসাইটে নিজেদেরকে ডেলাওয়্যার রাজ্য কর্তৃক অনুমোদিত বলে দাবি করলেও, যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার ডিপার্টমেন্ট অব এডুকেশন-এর অফিসিয়াল তালিকায় AECU-কে 'অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান' (Nonauthorized Institutions) হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ, যুক্তরাষ্ট্রের সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারের চোখে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো আইনগত বা স্বীকৃত অনুমোদন নেই, যা একটি ডক্টরেট ডিগ্রির আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য অপরিহার্য।এই দুই তথ্য একসঙ্গে বিশ্লেষণ করলে সরকারি প্রতিষ্ঠানে 'ডক্টর' পদবী ব্যবহারের ক্ষেত্রে কিছু মৌলিক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়। প্রথমত, একজন কর্মকর্তা সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন একটি পদবী ব্যবহার করছেন, যার ডক্টরেট-ডিগ্রি প্রদানকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বীকৃতি নিয়েই সংশয় রয়েছে। দ্বিতীয়ত, একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ, পদোন্নতি বা পদবী অনুমোদনের সময় নিয়োগবিধি অনুসারে সংশ্লিষ্ট ডিগ্রিগুলোর বৈধতা যাচাই করা হয়। এক্ষেত্রে, AECU-এর স্বীকৃতি না থাকা সত্ত্বেও কীভাবে এই পদবী অনুমোদন পেল এবং দীর্ঘদিন ধরে সরকারি ওয়েবসাইটে ব্যবহৃত হচ্ছে— তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।বিষয়টির স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে এবং নিয়োগবিধির শর্ত পূরণ হয়েছে কি না, তা জানার জন্য ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সংশ্লিষ্ট মানবসম্পদ বিভাগ বা আইসিটি বিভাগের পরিচালকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও, এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত তাদের কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি।পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, যদি হাজেরা খাতুনের ডক্টরেট ডিগ্রিটি প্রকৃতপক্ষে অননুমোদিত প্রতিষ্ঠান থেকে নেওয়া হয়ে থাকে, তবে এটি কেবল একজন ব্যক্তির পদবী ব্যবহারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না; এটি একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানের নিয়োগবিধি, স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিয়েও বড় ধরনের প্রশ্ন তৈরি করে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে ইসলামিক ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষের স্পষ্টীকরণ এবং পদবী ব্যবহারের অনুমোদনের প্রক্রিয়াটি জনসমক্ষে আনা প্রয়োজন।

ওপেন নিউজ ২৪

সম্পাদক ও প্রকাশক ঃ মোস্তফা কামাল 

কপিরাইট © ২০২৫ ওপেন নিউজ ২৪ । সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত