নব্বইয়ের দশকে এরশাদ সরকারের পতন হলে ঝালকাঠির হেভি ওয়েট নেতা আমির হোসেন আমুর ছত্রছাড়ায় ঢাকায় ৫০ টাকা পকেটে নিয়ে আসা গোলাম মোস্তফা ওরফে টুকু আজ শত শত কোটি টাকার মালিক।
জানা যায় প্রথমে সে চাকরি নেয় একটি লাইটিং এর দোকানে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতা আমির হোসেন আমু, শেখ সেলিম সাবেক এমপি এর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন সহ বিভিন্ন ধরনের লাইট ও বৈদ্যতিক সরঞ্জাম, সাপ্লাইয়ের কাজ পায়।
৬ মাস না যেতেই বেশির ভাগ বাতিই অকেজো হয়ে যায়। যেখানে এই বাতির ওয়ারেন্টি ছিল কিন্তু পরবর্তিতে প্রভাবশালী মহলের ছত্রছাড়ায় অকেজো আর নষ্ট বাতি পরিবর্তন করতে হয় নাই, ফলে সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষয়-ক্ষতি হয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসলে শেখ সেলিম সাবেক এমপি-কে ব্যবসায়িক পার্টনার বানিয়ে নিয়ে ব্যাপক দূর্নীতি ও লুটপাট শুরু করে।
ঢাকায় হাতিরঝীল, ক্যান্টনমেন্ট সহ সরকারী বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজের নামে হাতিয়ে নেয় শত শত কোটি টাকা।
পরবর্তীতে ২০১১ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে এই গোলাম মোস্তফা ওরফে টুকু যেন সোনার হরিণ হাতে পায়।
এরপর আর তাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নাই। আওয়ামী লীগ -এর প্রভাবশালী মহলের ছত্রছাড়ায় শেখ সেলিম ও তার মেয়ের জামাই প্রিন্স এর পার্টনারশীপে গড়ে তোলে এক শক্তিশালী সিন্ডিকেট চক্র।
ফলসরূপ এয়ারপোর্টের ৩য় টার্মিনাল, শেখ হাসিনা ক্যান্টনমেন্ট, লেবুখালি ক্যান্টমেন্ট, চট্টগ্রাম বন্দর, মংলা বন্দর, পায়রা বন্দর সহ বড় বড় প্রতিষ্ঠানে ব্যাপক দূর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়।
আওয়ামী লীগ নেতা শেখ সেলিম ও আমির হোসেন আমুর প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় এই গোলাম মোস্তফা ওরফে টুকুর পরিচয় হয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কিছু নেতার সাথে।
এর মধ্যে পংকজ দেবনাথ সাবেক এমপি, রেজাউল হাসান সাবেক এমপি, মোঃ সাইফুল ইসলাম সাবেক এমপি প্রমুখের সাথে এবং এদের সহযাগীতায় গড়ে তোলে দুবাই ভিত্তিক সোনার চোরাচালানের চক্র।
২০২৪ এর গনঅভ্যুত্থানের সময় এই নেতারা তার হোটেল ওমনি রেসিডেন্সিতে আত্মগোপন করে এবং তাদের সমস্ত টাকা-পয়সা, স্বর্ন, স্বর্নের বার, হীরা সহ কয়েক হাজার কোটি ঢাকা দুবাই, লন্ডন, আমেরিকা, ভারতে পাচার করে হুন্ডির মাধ্যমে।
উপহারস্বরূপ মো: সাইফুল ইসলাম সাবেক এমপির ব্যক্তিগত ব্যবহৃত বিলাস বহুল ল্যান্ডক্রজার জিপ গাড়ীটি যাহার রেজিঃ নং ঢাকা মেট্রো-ঘ ১৭-০০৬৫। গাড়িটি গোলাম মোস্তফা ওরফে টুকুকে দিয়ে যায়।
এবং টুকু ঐ গাড়ী নিজের নামে বদলি করে নেয় বিআরটি -এর কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তার সাহায্যে। বর্তমানে এই গোলাম মোস্তফা ওরফে টুকু বনানী, বারিধারা, গুলশান, উত্তরা, পল্টনে, একাধিক বিলাসবহুল হোটেল গড়ে তোলে।
বনানীর ব্লক-ই,১৩ নাম্বার রোডের ১৩৮ নাম্বার বাড়ীটি ৬০ কোটি টাকায় কিনে নেয় টুকু। গুলশান-২ নাম্বার গোলচক্করে অবস্থিত ১টি বানিজ্যক বিল্ডিং কিনে নেয় ৮০ কোটি টাকায়। যাহার ঠিকানা ১৫,বরুন ভবন মার্কেট, গুলশান ২, কস্তুরী হোটেলের বিল্ডিং।
এছাড়া বারিধারা ডিপ্লোমেটিক জোন এ ১৪নং রোডের ৬নং বাড়ীটি ৫০ কোটি টাকায় কিনে নিয়ে বিলাসবহুল ৫ তারকা মানের হোটেল গড়ে তোলে।
বনানীর ১৫ নাম্বার রোডের ৪২ নাম্বার বাড়ীটি আনুমানিক ৫০ কোটি টাকায় কিনে ৫ তারকার মানের হোটেল গড়ে তোলে। গুলশান ১ নাম্বার, জব্বার টাওয়ারের ৪র্থ তলায় রয়েছে তার বাণিজ্যিক ফ্লোর।
এছাড়া ঝালকাঠি জেলার ডি.সি. অফিসের পাশে রয়েছে তার মূল্যাবান সম্পত্তি যেখানে ১৫ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে তৈরি হচ্ছে বিলাসবহুল হোটেল।
ময়মনসিংহ ভালুকার মনোহরপুরে রয়েছে তার ৩০ একরের উপর আম বাগান ও জলসা ঘর। পূর্বাচলে রয়েছে ২০ বিঘা জমি। দুবাই, সৌদি আরব সহ বিভিন্ন দেশে আছে তার হোটেল ব্যবসা।
আওয়ামী লীগের সাবেক প্রাক্তন মন্ত্রী, এমপি-দের সাথে আছে তার ব্যবসা ও সুসম্পর্ক।
২৪শের গনঅভুত্থ্যানের পর তার ব্যবহৃত ঢাকা মেট্রো-চ ২০-৬৬৫১ গাড়িটি ব্যবহার করে অনেক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি,মন্ত্রী এয়ারপোট পার হয় বলে জানা গেছে । এই গাড়ীতে, "ADC" স্টীকার লাগানো আছে। বর্তমানে এইসব পলাতক সাবেক এমপি. মন্ত্রীর টাকায় সারাদেশে নাশকতায় ব্যবহার করা হচ্ছে এই টুকুর প্রত্যক্ষ মদতে । সে প্রায়ই দুবাই, চায়না, সৌদি আরব ও ভারত গমন করে শলা পরামর্শ ও আর্থিক সুবিধা নিতে যান।
বর্তমানে ৮-১০ কোটি টাকা পাঠায় হুন্ডির মারফতে দুবাইয়ে অবস্থানরত সাভার আশুলিয়ার আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি মোঃ সাইফুল ইসলাম এর কাছে।
গোলাম মোস্তফা ওরফে টুকু, ঢাকা সহ সারাদেশে ভারত ও আওয়ামী লীগের নাশকতা,খুন ইত্যাদির কাজে গুরুত্বপূর্ণ স্লিপিং এজেন্ট হিসেবে সক্রিয় ভূমিকা পালন করছেন। ৩০ জুন ২০২৪ ইং দৈনিক সংবাদ দিগন্ত পত্রিকায় তার নামে একটা নিউজ হয়, যেখানে অসামাজিক কাজে, একাধিক আওয়ামী লীগের নেতা লিপ্ত ছিলেন তার ওমনি রেসিডেন্সি হোটেল বারিধারায়।
তার পাসপোর্ট নিয়ে তদন্ত করলে ইনকিলাব মঞ্চের হাদি হত্যাকাণ্ড সহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যাবে। প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এসকল আওয়ামী লীগের মাস্টারমাইন্ড ও অর্থ যোগদানকারী ব্যক্তিদের বিরুদ্বে অতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন সচেতন মহল।

মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ২৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন