অধিকাংশ নারী ও শিশু নির্যাতন ঘটছে উপজেলা গুলোর গ্রামাঞ্চলে, রংপুরে সাম্প্রতিক তিন মাসে ভয়াবহভাবে বেড়েছে খুন, ধর্ষণ ও নারী–শিশু নির্যাতনের ঘটনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা সত্ত্বেও অপরাধ দমনে কার্যকর নিয়ন্ত্রণ না থাকায় জনমনে বাড়ছে উদ্বেগ ও আতঙ্ক। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর—এই তিন মাসে রংপুর মহানগরীসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় ১৩টি খুন এবং ৩৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় জেলায় মোট ৮৯৯টি অপরাধ সংঘটিত হয়েছে। রোববার (১৪ ডিসেম্বর) দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত জেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য উপস্থাপন করেন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট খৃস্টফার হিমেল রিছিল। সভায় জানানো হয়, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে রংপুর জেলায় ৬ জন খুন হয়েছেন। এ মাসে ৩৫টি চুরির পাশাপাশি ৪টি অপহরণ এবং ৯টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নারী নির্যাতনের শিকার হন ২৮ জন। সব মিলিয়ে সেপ্টেম্বর মাসে জেলায় মোট অপরাধ সংগঠিত হয় ৩০৪টি, যা পরবর্তী মাসগুলোর তুলনায় ছিল বেশি। অক্টোবর মাসে খুনের ঘটনা ঘটে ৫টি। এ মাসে ৩২টি চুরি ও ৩টি সিধেল চুরির ঘটনা নথিভুক্ত হয়। একই সময়ে ৩টি অপহরণ ও একটি ডাকাতির ঘটনাও ঘটে। নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হন ৪১ জন। ধর্ষণের ঘটনা ঘটে ২১টি, যার মধ্যে ২০টি ঘটেছে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। অক্টোবরে মোট অপরাধের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩১৩টি। নভেম্বর মাসে খুনের ঘটনা কমে ২টিতে নেমে এলেও নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনা কমেনি। এ মাসে নারী ও শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩৫ জন, যার মধ্যে ৩৩টি ঘটনা ঘটেছে মহানগরের বাইরে উপজেলা পর্যায়ে। এছাড়া ৭ জন ধর্ষণের শিকার হন। চুরি হয়েছে ২০টি স্থানে এবং সিধেল চুরি হয়েছে ২টি। অপহরণের ঘটনা ঘটেছে ৩টি। নভেম্বরে মোট অপরাধ সংগঠিত হয়েছে ২৮২টি। আইনশৃঙ্খলা সভায় উপস্থাপিত তথ্যে দেখা যায়, ধর্ষণ ও নারী–শিশু নির্যাতনের অধিকাংশ ঘটনাই ঘটছে নগরীর বাইরে উপজেলা ও গ্রামাঞ্চলে। এতে গ্রাম পর্যায়ে নজরদারি দুর্বলতা এবং সামাজিক প্রতিরোধ ব্যবস্থার ঘাটতির বিষয়টি আবারও সামনে এসেছে। ক্রমবর্ধমান অপরাধে সাধারণ মানুষের মধ্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন সভায় উপস্থিত জনপ্রতিনিধি ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। অনেকেই অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। রংপুর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা পুলিশ সুপার মো. মারুফাত হুসাইন জানান, অপরাধ দমনে থানা পর্যায়ে নজরদারি বাড়ানো হচ্ছে এবং বিশেষ অভিযান জোরদার করা হবে।সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সিভিল সার্জন ডা. শাহীন সুলতানা, সরকারি আইনজীবী অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী বেলাল, বিভিন্ন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা। সভা থেকে অপরাধ দমনে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ, গ্রামাঞ্চলে পুলিশি টহল বাড়ানো এবং নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়।

সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন