চোরের তাণ্ডবে অতিষ্ঠ এলকাবাসী: রাত জেগে পাহারা দিয়েও মিলছেনা স্বস্তি।
স্টাফ রিপোর্টার : লিটন সিকদার
নড়াইলের কালিয়া উপজেলার নড়াগাতী থানার পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে চুরি-ছিনতাই এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে। পহরডাঙ্গা, সরসপুর, পাখিমারা, বল্যাহাটি, কচুয়াডাঙ্গা, মূলশ্রী, চাপাইল, বাগুডাঙ্গা ও চরমধুপুর—এক সময়ের নিরাপদ এ গ্রামগুলো এখন চোরচক্রের অবাধ তৎপরতায় আতঙ্কের জনপদে রূপ নিয়েছে।
গ্রামবাসীরা জানাচ্ছেন, প্রায় প্রতিদিনই চুরি হচ্ছে টিউবওয়েল, হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল, মোবাইল ফোন, থালা–বাটি, ঘরের জিনিসপত্র থেকে শুরু করে নারকেল–সুপারি এবং ক্ষেতের ফসল পর্যন্ত। ফলে বাড়ছে মানুষের উদ্বেগ, কমছে নিরাপত্তাবোধ। অনেকেই এখন সন্ধ্যার পর বাইরে বের হতে ভয় পাচ্ছেন।
মূলশ্রী গ্রামের আসলাম চৌধুরী জানান, সম্প্রতি তাঁর গোয়ালঘর থেকে একসঙ্গে তিনটি গরু চুরি হয়েছে, যা তাঁর পরিবারকে চরম সংকটে ফেলেছে। কৃষক সোবহান শেখ বলেন, বাচ্চা হওয়ার উপক্রম একটি বকনা গরু শিকল কেটে নিয়ে গেছে চোরেরা। একই গ্রামের মুয়াজ্জিন নিজাম মোল্লা জানান, মসজিদের দানবাক্স একাধিকবার ভেঙে টাকা নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। অন্যদিকে বল্যাহাটির বাগান মালিক লিটন সিকদার বলেন, নারকেল–সুপারি চুরি এখন নিত্যদিনের ঘটনায় পরিণত হয়েছে; পুরো মৌসুমের ফসলই শেষ। চাপাইল গ্রামের এক গৃহবধূ জানান, গভীর রাতে চোরেরা তাঁদের টিউবওয়েল খুলে নিয়ে গেছে।
চুরি প্রতিরোধে স্থানীয়রা রাত জেগে পালাক্রমে পাহারা দিচ্ছেন। তরুণ, যুবক ও বৃদ্ধ সকলেই পাহারা কাজে যুক্ত হলেও কোনো ফল মিলছে না। কৃষক নূর ইসলাম বলেন, “রাতভর জেগে থাকি, তবু চোরকে ধরা যায় না। মনে হয় চক্রটি খুব সংগঠিত।”
এদিকে ইউনিয়ন পরিষদের উদ্যোগে স্থাপিত সিসিটিভির বেশিরভাগই অকার্যকর হয়ে পড়েছে। আলো স্বল্পতা, রক্ষণাবেক্ষণের অভাব ও মনিটরিং না থাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা কার্যত নামমাত্র। স্থানীয় ব্যবসায়ী হেলাল সিকদার বলেন, “ক্যামেরা আছে ঠিকই, কিন্তু কাজ করে না। দরকারের সময় ফুটেজও পাওয়া যায় না।”
চলমান পরিস্থিতিতে মানুষের মধ্যে ভয় ও অস্থিরতা বাড়ছে। অনেক পরিবার জানালা-দরজা শক্ত করে না ঘুমাতে পারছেন না। শিশুদের মাঝেও আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে।
গ্রামবাসীরা দ্রুত নিয়মিত পুলিশ টহল বৃদ্ধি, অকার্যকর সিসিটিভি মেরামত, গ্রাম পুলিশকে সক্রিয় করা এবং চোরচক্রসহ তাদের আশ্রয়দাতাদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন। তাদের স্পষ্ট স্লোগান—“চুরি আর নয়, আমাদের নিরাপদ জীবন চাই।”
নড়াগাতী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জানান, চোরচক্র শনাক্তে বিশেষ নজরদারি ও অভিযান চলছে। কয়েকজনকে চিহ্নিতও করা হয়েছে। তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন—“চোরেরা এত সক্রিয়, তবু এতদিনেও ধরা যাচ্ছে না কেন?”
পহরডাঙ্গা ইউনিয়নের সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখন প্রশাসনের জরুরি পদক্ষেপের অপেক্ষায়। সময়মতো ব্যবস্থা না নিলে চুরি-ছিনতাই আরও ভয়াবহ আকার নিতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন এলাকাবাসী।
০১৭১৬-৮০২২৩০

বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন