ফেরিওয়ালার নাম—আনসার আলী সরদার
সকাল হলেই কাঁধে এক মন বোঝা। শহর থেকে গ্রাম, আবার গ্রাম থেকে শহর—জীবনের তাগিদে হাঁটতে হাঁটতে যাত্রা শুরু করেন আনসার আলী সরদার। বয়স তার পঞ্চাশের কোঠায়, কিন্তু মুখের রেখাগুলো বলছে—জীবনের বোঝা তার বয়সের থেকেও অনেক ভারী।
২৬ বছর ধরে তিনি এই পেশায়। ফেরি করে মানুষকে প্রয়োজনীয় জিনিস পৌঁছে দেন। কাধে বড় বোঝা হাতে বাক্স নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। কারণ ঘরে অপেক্ষায় আছে তাঁর পরিবার—স্ত্রী, সন্তান, আর বৃদ্ধ মা।
দিন শেষে ভালো বেচাকেনা হলে আয় হয় ৪০০–৫০০ টাকা। এই টাকাতেই সংসারের ভাত, ওষুধ, বাজার—সবই চালাতে হয় তাদের। জীবনযুদ্ধে প্রতিদিন যে যুদ্ধ আনসার আলীর, তার মূল্য কি কখনও আমরা সত্যিকারের বুঝি?
“ আনসার আলী সাথে কথা হলো।
কথার শেষে তিনি আবার হাসলেন। সেই পরিচিত, ক্লান্ত অথচ শান্ত হাসি—যা দারিদ্র্যকেও হার মানায়।
একসময় গ্রামবাংলার রাস্তায় ফেরিওয়ালাই ছিল সবচেয়ে চেনা দৃশ্য। তাদের হাঁকডাকেই সকাল বিকেল জমে উঠত মানুষজনের আড্ডা ও দোকানের সামনে ভিড়। কিন্তু কালের বিবর্তনে সেই পেশা আজ ধীরে ধীরে বিলুপ্তির পথে। বাজারে বড় দোকান, অনলাইন ব্যবসা—সব মিলিয়ে ফেরিওয়ালাদের জায়গা ছোট হয়ে এসেছে।
তারপরও আনসার আলী থেমে যাননি। কারণ তার স্বপ্ন আছে। স্বপ্ন—সন্তানকে মানুষ করা, বৃদ্ধ মায়ের মুখে হাসি ফোটানো।
স্বপ্ন দেখতে তো মানা নেই।
এমন হাজারো আনসার আলী সরদার প্রতিদিন জীবনযুদ্ধে নামে, শুধু কয়েকদানা ভাতের জন্য, পরিবারের জন্য, ভালোবাসার জন্য।
তবুও তারা হাসে।
হয়তো সেই হাসিই আমাদের সমাজের আসল শক্তি—যেখানে নীরবে বেঁচে থাকার জন্য লড়ে যাচ্ছে হাজারো মানুষ, যাদের গল্প আমরা অনেক সময়ই দেখি না, শুনি না…
কিন্তু তাদের গল্পই আসলে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে রাখে।

বুধবার, ১৯ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ১৯ নভেম্বর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন