জীবনের কঠিন বাস্তবতার সাথে লড়াই করে বেঁচে আছেন সাত দশকের পরিমল মন্ডল। বয়স ৭০ হলেও তিনি হার মানেননি দারিদ্র্য ও অভাবের কাছে। গরুর গাড়ি দিয়ে সংসার চালানোর দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকলেও এখন আর গরু নেই তাঁর। তাই নিজের শরীরকেই বানিয়েছেন দুই গরুর সমান শক্তির বাহন। প্রতিদিন খালি পায়ে ৩০-৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ঠেলে নিয়ে যান বাঁশ বোঝাই গাড়ি। আর এভাবেই চলে চার সদস্যের সংসার।
পাইকগাছার রাড়ুলী ইউনিয়নের কাটিপাড়া গ্রামের বাসিন্দা পরিমল কৈশোরেই শিখেছিলেন গরুর গাড়ি চালানো। তখন তাঁর বাবা অধির মন্ডল গরুর গাড়ি চালিয়ে সংসার চালাতেন। পড়াশোনা বেশি দূর এগোয়নি অভাবের কারণে। তবে বাবার সঙ্গে থেকে হয়েছেন একজন দক্ষ গাড়িয়াল। এলাকায় এখনো অনেকে তাঁকে চেনেন “পরিমল গাড়িয়াল” নামে।
পরিমল জানান, প্রায় ৫৫ বছর আগে বাবার সঙ্গে মালামাল বহন করে সংসারের হাল ধরতে হয়। তখন রাস্তা ছিল কাঁচা, বর্ষায় কাদা মাড়িয়ে গাড়ি চালাতে হতো। বাবার বয়স হলে তিনিই একা গরুর গাড়ি চালানো শুরু করেন। কিন্তু দিন বদলের সাথে বদলেছে পরিবহন ব্যবস্থাও। গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি করতে হয় তাঁর দুই গরু। সেই থেকে আর কেনা হয়নি। বাধ্য হয়ে নিজেকেই ঠেলতে হচ্ছে দুই গরুর সমান বোঝা।
প্রতিদিন সকাল থেকে বাঁশকাটা শ্রমিকদের কাছ থেকে ২০/২৫টা বাঁশ গাড়িতে বোঝাই করেন তিনি। তারপর একাই ঠেলে নিয়ে যান বাঁকা বাজারের আড়তে। এতে আয় হয় ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। এই টাকাতেই কোনোমতে চলে সংসার।
বাঁশকাটা শ্রমিক আকরাম হোসেন বলেন, “পরিমল ভাই আসলেই দুই গরুর সমান বোঝা বহন করেন। একাই গাড়ি বোঝাই করে আড়তে পৌঁছে দেন।”
প্রতিবেশী সুনিল ঢালী বলেন, “এই বয়সে এত কষ্ট করে কাজ করা সত্যিই অবিশ্বাস্য। তিনি দুই গরুতে যে মালামাল বহন করতেন, এখন তা নিজের শক্তিতেই বহন করেন।”
পরিমলের স্ত্রী লক্ষ্মী রানী জানান, বিয়ের আগে থেকেই স্বামী গরুর গাড়ি চালাতেন। গরুর খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় গরু বিক্রি করতে হয়। এখনো সংসার চালাতে স্বামীকে ঠেলতে হচ্ছে দুই গরুর সমান বোঝা। তবে তিনি নিজেও বাড়িতে গাভি গরু, হাঁস-মুরগি পালন করে সংসারে সহায়তা করেন।
বাঁকা বাজারের আড়ৎদার অর্চনা রানী বলেন, “আমি প্রায় দুই দশক ধরে বাঁশের ব্যবসা করি। এই সময়ের মধ্যে পরিমল গাড়িয়ালকে সবসময় পরিশ্রম করতে দেখেছি। বয়স হলেও কাজের ক্ষেত্রে তাঁর জুড়ি নেই।”
বৃদ্ধ পরিমলের জীবন কষ্টের হলেও সাহসী। দুই গরুর সমান বোঝা টেনে সংসার চালানোর গল্প যেন দারিদ্র্য জয় করা এক অনন্য অধ্যায়।

শুক্রবার, ০৭ নভেম্বর ২০২৫
প্রকাশের তারিখ : ০১ অক্টোবর ২০২৫

আপনার মতামত লিখুন