মঙ্গলবার, ৩০ ডিসেম্বর ২০২৫
ওপেন নিউজ ২৪

গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জে বিএনপিতে উত্তেজনা

গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনে বিএনপির মনোনয়নপ্রত্যাশী শামীম কায়সার লিংকনের মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গন। দফায় দফায় গণমিছিল, মানববন্ধন, রাস্তা অবরোধ ও অনশন কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন ত্যাগী নেতা-কর্মীরা। স্থানীয় বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদলসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা বলছেন— লিংকনের অতীত রাজনৈতিক ভূমিকা দলের জন্য ক্ষতিকর, তাই তাকে এই আসনের প্রার্থী করা যাবে না।এই দাবিতে সম্প্রতি দলের হাইকমান্ড বরাবর ৬৩ জন নেতা-কর্মীর স্বাক্ষরে একটি অভিযোগপত্র পাঠানো হয়েছে।অভিযোগপত্রে শামীম কায়সার লিংকনের বিরুদ্ধে যে অভিযোগগুলো আনা হয়েছে১) ১/১১–এ দলের বিরুদ্ধে অবস্থানঅভিযোগে বলা হয়—শামীম কায়সার লিংকন ১/১১ সময় বিএনপি ও জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেন। সে সময় তিনি দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ এবং অপপ্রচার চালিয়েছিলেন।২) ছাত্রদল ভেঙে সংস্কারপন্থীদের পক্ষে নেওয়ার চেষ্টাঅভিযোগে উল্লেখ রয়েছে—১/১১–এর সময় তিনি ছাত্রদল ভেঙে সংস্কারপন্থীদের পক্ষে নেওয়ার দায়িত্বে ছিলেন, যা দলের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর ছিল।৩) ২০০৮ সালের নির্বাচন দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে করাঅভিযোগপত্রে বলা হয়—দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে ২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন, যার ফলে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়।৪) আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপস্থিতি ও মালয়েশিয়ায় অবস্থাননেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন—২০১৮ সালের গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় নির্বাচনের সময় তিনি দলের ডাকে সাড়া না দিয়ে মালয়েশিয়ায় অবস্থান করেন। শুধু তাই নয়, গত ১৫-১৬ বছর গোবিন্দগঞ্জে না থেকে ঢাকায় ও মালয়েশিয়ায় চাকরি-বাণিজ্য করে আরামে জীবনযাপন করেছেন।ফলে আন্দোলন-সংগ্রামে না থাকায় তার বিরুদ্ধে একটিও রাজনৈতিক মামলা নেই।৫) নিষ্ক্রিয় একজনকে মনোনয়ন দিলে নেতাকর্মীদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হবেঅভিযোগপত্রে সতর্ক করে বলা হয়—এই আসনে শামীম কায়সার লিংকনকে মনোনয়ন দেওয়া হলে,দলের নীতি-নির্দেশনার ব্যত্যয় হবে,ত্যাগী নেতাকর্মীরা নিরুৎসাহিত হবে,এবং দলের সাংগঠনিক কর্মকাণ্ডে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।তারা আশঙ্কা করেন—এই কারণে নিশ্চিত জয়ী আসনটিও হারানো যেতে পারে।৬) ত্যাগী নেতাদের মধ্য থেকে মনোনয়ন দেওয়ার দাবিস্থানীয় নেতারা মনে করেন—দীর্ঘ সময় আন্দোলন-সংগ্রামে যারা মামলা, হামলা, নির্যাতন, জেল-জুলুম সহ্য করেছেন, তাদের মধ্য থেকেই মনোনয়ন দিলে গাইবান্ধা-৪ আসনটি পুনরুদ্ধার নিশ্চিত।নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় নেতা বলেন—“দীর্ঘ দিনের ত্যাগী নেতা-কর্মীদের বাদ দিয়ে বহিরাগত ও নিষ্ক্রিয় কাউকে নমিনেশন দিলে গোবিন্দগঞ্জের বিএনপির অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। দলীয় শক্তি ঐক্যবদ্ধ রাখতে হলে ত্যাগীদের মর্যাদা দিতে হবে।”সার্বিকভাবে, গোবিন্দগঞ্জে বিএনপি নেতাকর্মীদের বড় অংশ শামীম কায়সার লিংকনকে মনোনয়ন দেওয়ার বিরোধিতা করছেন। অভিযোগপত্রে তার অতীত রাজনৈতিক ভূমিকা, নিষ্ক্রিয়তা এবং আন্দোলন-সংগ্রামে অনুপস্থিতিকে তুলে ধরে মনোনয়ন বাতিলের জোর দাবি জানানো হয়েছে। এখন দলের হাইকমান্ড কী সিদ্ধান্ত নেয়— তা নিয়ে আগ্রহ ও উত্তেজনা বাড়ছে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে।

গাইবান্ধা-৪ গোবিন্দগঞ্জে বিএনপিতে উত্তেজনা