মোঃ সাহাজুদ্দিন সরকার ||
গাজীপুরের বাসন এলাকার ছোট্ট একটি ভাড়া বাসায় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার অপেক্ষায় দিন কাটছে শাহাজাদী বেগমের। দীর্ঘ দুই বছরের ক্যানসারযুদ্ধে পরাস্ত তিনি এখন শয্যাশায়ী। পাশে রয়েছেন দিনমজুর স্বামী, আর কোলে মাত্র ৩ মাসের শিশুসহ তিন সন্তান। একসময় স্বামী–স্ত্রী দু’জনের আয়ে চলা সংসার আজ ভেঙে পড়েছে অভাব-অনটনের করাল গ্রাসে।হঠাৎ ধরা পড়া মরণব্যাধি শুধু শরীরকেই ক্ষতবিক্ষত করেনি—ছিনিয়ে নিয়েছে চাকরি, আয়-রোজগার আর বাঁচার শেষ আশাটুকুও। অথচ জীবনের কাছে একটু দয়া, একটু সহানুভূতি চেয়েও কিছুই মেলেনি তার ভাগ্যে।দীর্ঘ মাস ঘর ভাড়া বকেয়া পড়ায় মালিকের চোখ রাঙ্গানো সয্য করতে হচ্ছে নিয়মিত। ঘর থেকে বের করে দিলে থাকতে হবে খোলা আকাশের নিচে।শয্যায় পড়ে থাকা শাহাজাদী আজ কোলে থাকা নবজাতক সন্তানসহ পুরো সংসারের দিকে তাকিয়ে অসহায় কান্নায় ভেঙে পড়েন বাবা,মা।২০ বছর আগে বিয়ে করে শুরু হয়েছিল তাদের নতুন পথচলা। বাবাহীন সংসারে দিনমজুর স্বামীকে নিয়েই লড়াই করে কাটছিলো জীবনের কঠিন দিনগুলো। এরপর পোশাক কারখানার চাকরি কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছিল।কিন্তু ঠিক তখনই জীবনের নির্মমতম আঘাত—দু’বছর আগে তার শরীরে ধরা পড়ে ক্যানসার। অসুস্থ শরীরে যখন টিকে থাকার আশা নিয়ে দরজায় দরজায় ছুটছিলেন, তখনই কারখানা কর্তৃপক্ষ তাকে চাকরিচ্যুত করে দেয়। হাজার অনুরোধ–কান্নার ধাক্কাও ভাঙাতে পারেনি কর্তৃপক্ষের হৃদয়। চাকরির ভরসাটুকু হারিয়ে আরও গভীর অন্ধকারে তলিয়ে যান শাহাজাদী। চিকিৎসা বন্ধ হয়ে যায়, অভাবের কষ্ট বাড়তে থাকে। ৩ মাসের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে বেঁচে থাকার আকুতি জানান শাহাজাদী—যেন অন্তত শিশুটা বাঁচে, বড় দুই সন্তানটাও বাঁচে।এই সংসারের একমাত্র উপার্জন আজ দিনমজুর স্বামীর হাতে। তার ইনকামই ঠিক করে—সেদিন চুলায় আগুন জ্বলবে, নাকি কাটবে অনাহারে। কখনো হয়তো প্রতিবেশীদের সহমর্মিতায় জোটে এক বেলা খাবার।উৎসবের দিনগুলোতেও আলোর দেখা মেলে না এই পরিবারের ঘরে। ক্ষুধার্ত সন্তানদের “মা, ভাত দাও”—এই ডাক শুনে শয্যাশায়ী মা কিছুই করতে পারেন না। চোখ ভেজে শুধু কান্নায়।প্রতিটি সকাল যেন নিয়ে আসে শাহাজাদীর পরিবারে নতুন আর্তনাদ, নতুন অসহায়ত্ব।শাহাজাদীর ( দুই ছেলে)প্রতিবেশীরা মনে করেন—অল্প একটু সহযোগিতা, একটু মানবিক হাত বাড়ানোই ঘুরে দাঁড়াতে সাহায্য করতে পারে এই পরিবারটিকে।জীবন নামের নদী এখনও বয়ে চলেছে… কিন্তু শাহাজাদী বেগম ও তার সন্তানের জীবনের স্রোত থেমে গেছে বহু আগেই।আজ সমাজের দয়া–সহযোগিতা হলেই হয়তো আবার আলো দেখতে পারে এই পরিবার—তিন সন্তানের মুখে ফিরতে পারে ভবিষ্যতের হাসি।