ইনফরমেশন মিডিয়া ||
পাবনার ঈশ্বরদীর গর্ব প্রফেসর ডা. কামরুল ইসলামঢাকার শ্যামলীর এক সাধারণ ভবন—তবে সেই ভবনের ভেতরে প্রতিদিন ঘটে অসংখ্য জীবনের পুনর্জন্ম। এখানেই কাজ করেন এক অসাধারণ মানুষ, প্রফেসর ডা. কামরুল ইসলাম। কিডনি বিশেষজ্ঞ এই চিকিৎসক আজ দেশের মানুষের কাছে মানবতার প্রতীক।পাবনার ঈশ্বরদীর এক সাধারণ পরিবারে জন্ম নেওয়া এই মানুষটি ছোটবেলা থেকেই দেখেছেন কষ্ট, চিকিৎসা-বঞ্চনা আর দারিদ্র্যের যন্ত্রণা। সেই অভিজ্ঞতাই তাঁকে অনুপ্রাণিত করে চিকিৎসক হওয়ার পথে। ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৪০তম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে সম্মিলিত ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম স্থান অর্জন করে স্বর্ণপদকসহ এমবিবিএস ডিগ্রি লাভ করেন।এরপর FCPS, MS (Urology), FRCS (UK) ডিগ্রি অর্জন করে দেশে কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেন। কিন্তু সাফল্যের শিখরে পৌঁছেও থেমে যাননি তিনি — বরং শুরু করেন এক অনন্য পথচলা।২০১১ সালে সরকারি চাকরি ছেড়ে প্রতিষ্ঠা করেন ‘সেন্টার ফর কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজি হাসপাতাল (CKDU)’। লক্ষ্য একটাই — যেন গরিব ও মধ্যবিত্ত রোগীরাও পান জীবন ফিরে পাওয়ার সুযোগ।সাধারণ হাসপাতালে একটি কিডনি প্রতিস্থাপনে যেখানে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা খরচ হয়, সেখানে তাঁর প্রতিষ্ঠানে পুরো প্রক্রিয়া শেষ হয় প্রায় ২ লাখ টাকায়। সবচেয়ে অবাক করা বিষয় হলো—তিনি নিজে সার্জনের ফি এক টাকাও নেন না।প্রফেসর কামরুল ইসলাম বলেন,> “ডাক্তারি পেশা আসলে সেবার পেশা। আমার মায়ের ভালোবাসা থেকেই গরিব মানুষের পাশে দাঁড়ানো শিখেছি। যতদিন বেঁচে থাকব, ততদিন বিনা পারিশ্রমিকে এই কাজ চালিয়ে যাব।”এ পর্যন্ত তিনি দুই হাজারেরও বেশি কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সম্পন্ন করেছেন—বেশিরভাগই গরিব ও মধ্যবিত্ত পরিবারের রোগী। কেউ দিনমজুর, কেউ শিক্ষক, কেউ রিকশাচালক—যাদের জীবন থমকে গিয়েছিল কিডনি বিকলে, ডা. কামরুলের হাতে তারা ফিরে পেয়েছেন নতুন জীবন।প্রতিদিন শত শত মানুষ তাঁর ক্লিনিকে আসেন, অনেকেই চিকিৎসার ফি দিতে পারেন না। কিন্তু ডা. কামরুল ইসলাম কাউকেই ফিরিয়ে দেন না। তাঁর হাসপাতালে প্রতি মাসে ৫০০–৬০০ রোগী বিনা ফি-তে চিকিৎসা পান।২০২২ সালে তিনি স্বাধীনতা পুরস্কার পান চিকিৎসা ও সমাজসেবায় অসামান্য অবদানের জন্য। কিন্তু তাঁর ভাষায়—> “পুরস্কার নয়, আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো যখন দেখি আমার রোগী হাঁটছে, হাসছে, জীবনে ফিরছে।”এই অর্থলোভ, প্রতিযোগিতা আর চিকিৎসা-বাণিজ্যের যুগে প্রফেসর ডা. কামরুল ইসলাম যেন এক আলোকবর্তিকা। তিনি দেখিয়েছেন, চিকিৎসা মানে শুধু পেশা নয় — এটি হতে পারে মানুষের প্রতি ভালোবাসার এক নির্মল অঙ্গীকার।পাবনার সেই সাধারণ ছেলে আজ হাজারো জীবনের প্রতীক হয়ে উঠেছেন — যিনি কিডনি নয়, বদলে দেন জীবন।