মেহেদি হাসান ||
বিদেশে ছেলেকে পাঠিয়ে সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখেছিলেন নড়াইল সদর উপজেলার বিছালী গ্রামের কৃষক জাফর শেখ। কিন্তু প্রবাস ফেরত প্রতিবেশীর প্রলোভনে পড়ে সেই স্বপ্ন এখন দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। সুদে টাকা ও সহায়-সম্বল বিক্রি করে ৫ লাখ টাকা খরচে ছেলে শিমুলকে সৌদি আরবে পাঠালেও আকামা না পাওয়ায় তিনি আজ মানবেতর জীবন যাপন করছেন।পরিবারের অভিযোগ, চলতি বছরের ২৪ মে প্রতিবেশী খাইরুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের মাধ্যমে সৌদি আরবে যায় শিমুল। সরকারি স্ট্যাম্পে চুক্তি হয় যে আকামা করে নির্দিষ্ট কোম্পানিতে মাসিক ১ হাজার ৮০০ সৌদি রিয়াল বেতনে কাজে যোগ দেওয়া হবে। কিন্তু আকামা না দেওয়ায় পুলিশের ভয়ে মরুভূমিতে কষ্টে দিন কাটাচ্ছে তিনি। ভিডিও কলে ছেলের দুরবস্থার চিত্র দেখে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শিমুলের বাবা-মা ও স্ত্রী।জাফর শেখ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, “দুই মাস ধরে শুধু আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। ছেলের কষ্টে আমাদের ঘুম হারাম হয়ে গেছে।”বারবার আলোচনার পরও প্রতারিত অর্থ ফেরত না পাওয়ায় শিমুলের মা পারভীন বেগম বাদী হয়ে খাইরুল ইসলাম ও শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে নড়াইলের মানবপাচার প্রতিরোধ ট্রাইব্যুনালে মামলা দায়ের করেন। আদালত আগামী ২২ অক্টোবর পিবিআইকে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছেন।শিমুলের চাচা মাসুদ শেখ অভিযোগ করেন, “গ্রাম্য সালিশ ও থানায় একাধিকবার অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাইনি। মামলা করার পর থেকে অভিযুক্তরা উল্টো হুমকি দিচ্ছে।”তবে অভিযুক্ত শরিফুল ইসলাম অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “চুক্তি অনুযায়ী শিমুলকে কাজে দেওয়া হয়েছে। আকামার মেসেজও পাঠানো হয়েছে। কিন্তু কাজের কষ্ট সহ্য করতে না পেরে সে পালিয়ে গেছে।” তবে কোনো প্রমাণ তিনি দেখাতে পারেননি।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর পিবিআইয়ের এএসআই মহিদুল ইসলাম বলেন, “মামলার তদন্ত চলছে। তদন্ত শেষে বিস্তারিত বলা যাবে।”ভুক্তভোগী পরিবার সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রতারক চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি এবং ন্যায়বিচার প্রত্যাশা করছে।